ভিহ্মুক
(লেককের আত্মজীবনী – অ্যান্টন চেখভ একজন রাশীয়ান নাট্যকার এবং ছোটগল্প লেখক৷ তিনি ইতিহাসে শ্রেষ্ট ও জনপ্রিয় ছোটগল্প লেখকদের মধ্যে একজন। উনার জন্ম হয় ২৯শে জানুয়ারী ১৮৬০ সালে রাশীয়াতে এবং মৃত্যুবরন করেন ১৫ই জুলাই ১৯০৪ সালে, জার্মানিতে।
উনার লেখা ছোটগল্পের মধ্যে “ভিহ্মুক” অন্যতম জনপ্রিয় একটি গল্প।)
“বিনয়ি জনাব, দয়া করে এই দরিদ্র,হ্মুদার্ত লোকটির দিকে একটু তাকান। আজ তিন দিন যাবত আমি না খেয়ে আছি। এমনকি আমার কাছে পাঁচ কোপেকও(রাশিয়ান টাকা বা মুদ্রার খুদ্রতম মাএা) নেই যে একরাতের জন্য কোথাও থাকার বাসস্থান খুঁজব। প্রভুর নামে বলছি,আমি পাঁচ বছর গ্রামের এক স্কুলে শিহ্মকতা করেছি কিন্তু জেমস্টোভের চক্রান্তে মিথ্যা সাহ্মীর শিকার হয়ে চাকরিটা চলে যায়।”
পিটার্সবার্গের আইনজীবী স্কভর্টসভ লোকটার দিকে তাকানো মাএই তার গাঢ়-নীল বেশ লম্বা ঢিলে ছেড়া কোট, ঘোলা মাতাল চোখ আর গালের লাল প্যাচগুলো দেখে মনে হল এই লোককে তিনি আগে কোথাও দেখেছেন।
লোকটা বলতে থাকল “ এখন আমি কলুগা প্রদেশে একটি চারকি পেয়েছি কিন্তু সেখানে যাওয়ার উপায় নেই। আমি লজ্জিত সাহায্য চাওয়ার জন্য কিন্তু…….আমি পরিস্থিতির দ্বারা বাধ্য হয়েছি।”
স্কভর্টসভ লোকটার গ্যালোসের দিকে লহ্ম করে দেখল যে একটা সাধারন জুতার মত চ্যাটাল কিন্তু অপরটি বুটের মত পায়ের উপরিভাগ পর্যন্ত চলে এসেছে। এটা দেখে হঠাৎ তার কিছু একটা মনে আসলো,
“ শুনোন, পরশুদিন আপনার সাথে আমার সাদোভয় রাস্তায় দেখা হয়েছিল।তখনতো আপনি বলেননি যে আপনি একজন গ্রামের স্কুল-শিহ্মক ছিলেন বরং বলেছিলেন যে আপনি একজন বহিষ্কৃত ছাএ। মনে আছে?”
—“ন-া, না। এটা হতে পারে না”, বিহ্মুকটা ভেবাচেকা খেয়ে বিড়বিড় করে বলল। “ আমি একজন গ্রামের স্কুল-শিহ্মক, আর আপনি চাইলে প্রমান হিসাবে আপনাকে সেটার কাগজপত্রও দেখাতে পারি।”
“অনেক মিথ্যা বলেছেন। আপনি নিজেকে ছাএ হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন এমনকি বহিষ্কারের কারনও বলেছিলেন।
মনে পড়েছে?
স্কভর্টসভ বিতৃষ্ণা নিয়ে ছেঁড়া কাপড় পরা লোকটার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে রাগে লাল হয়ে কান্না করে দিয়ে বলল “এটা একটা ঘৃন্য কাজ, এটা প্রতারনা! আপনাকে আমি পুলিশে দিব। জঘন্য লোক আপনি। আপনি গরিব আর হ্মুদার্থ বলে এভাবে নির্লজ্জের মত মিথ্যা বলার কোনো অধিকার নেই আপনার!”
বিহ্মুকটা দরজার হ্যান্ডেল ধরে খাঁচায় আটকে থাকা পাখির মত হলের আশেপাশে দেখতে লাগল এবং বিড়বিড় করে বলল “ আ আ…. আমি মিথ্যা বলছি না! আমি কাগজপএ দেখাতে পারি।
স্কভর্টসভ রুষ্টভাবে বলতে থাকল “কে আপনাকে বিশ্বাস করবে?লোকজনের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য নিজেকে গ্রামের স্কুল শিহ্মক, ছাএ এগুলো বলে পরিচয় দিয়েছেন! এটা খুবই জঘন্য, নুংরা এবং খারাপ একটি কাজ। এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
স্কভর্টসভের রাগ বেড়েই যাচ্ছিল যার ফলে তিনি বিহ্মুকটাকে অসদয়ভাবে বকাঝকা করতে থাকেন। বিহ্মুকটার অনর্গল মিথ্যা স্কভর্টসভের মধ্যে ঘৃনা, বিদ্বেষ জাগিয়ে তুলছিল কারন স্কবর্টসভের তার নিজের মধ্যে থাকা যে গুণগুলোকে পছন্দ করেন এবং মহামূল্যবান মনে করেন সেগুলোর বিরূদ্ধে দাঁড়িয়েছিল বিহ্মুকের এই মিথ্যাগুলো। বিহ্মুকটার মিথ্যা আর বিশ্বাসঘাতক লাঞ্চনা স্কভর্টসভের এর ভিতরে গরিবদের প্রতি থাকা দানশীলতাকে কলুষিত করেছিল যা তিনি কোনো সন্দহ ছাড়াই গরিবদের দিতেন।
বিহ্মুকটা প্রথমে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, শপথও করে কিন্তু তারপর সে চুপ হয়ে যায় এবং মাথা নিচু করে লজ্জা কাটিয়ে উঠে বুকের বামপাশে হাত রেখে বলে “ আমি সত্যিই মিথ্যা বলছিলাম, আমি কোনো গ্রামের স্কুল- শিহ্মক বা ছাএ নয়! এগুলো সব বানোয়াট ছিল।আমি আসলে রাশিয়ার সংঙ্গীত পরিবেশনকারী দলের একজন ছিলাম কিন্তু ওটা থেকে আমাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে মদ খাওয়ার অপরাধে।
কিন্তু আমার কি করার আছে? বিশ্বাস করেন মিথ্যা বলা ছাড়া বাঁচার উপায় নেই।সত্যি বললে কেউ সাহায্য করবে না বরং না খেতে পেয়ে এবং রাতে বাসস্থানের অভাবে ঠান্ডায় জমে মারা যাব।
বুঝতে পেরেছি আপনি যা বলেছেন তা সত্যি কিন্তু আমার কি করার আছে এখানে? ”
“ আপনার কি করার আছে? আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছেন আপনার কি করার আছে ?” স্কভর্টসভ রাগে কান্না করে দিয়ে বলল।
এবার কিছুটা কাছে গিয়ে বলল “ কাজ, হ্যাঁ! আপনার কাজ করা উচিৎ”
বিহ্মুক বলল “ আমি জানি আমার কাজ করা উচিৎ কিন্তু আমি কাজ কোথায় পাব?”
“বাজে কথা, আপনাকে দেখতে এখনও যুবক,শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যবান মনে হচ্ছে।ইচ্ছা থাকলে এতদিনে একটা না একটা কাজ পেয়ে যেতেন। আপনি অলস,লাই পাওয়া মাতাল,আপনার শরীর থেকে মদের দোকানের মত ভদকার (একধরনের মদ) গন্ধ বের হচ্ছে। আপনি এতটাই ভুল এবং খারাপ পথে চলে গেছেন যে আপনার কোনো কিছু করারই যোগ্যতা নেই শুধু ভিহ্মা আর মিথ্যা বলা ছাড়া। কাজ পাওয়ার জন্য যদি আপনি আপনার এই অভ্যাসের পরিবর্তন করতে পারেন তাহলে আপনি অবশ্যই অফিসে চাকরি পেতে পারেন, রাশিয়ান গানের দলে পেতে পারেন অথবা বিলিয়ার্ড নির্মাতা হিসাবে যেখানে তেমন কোন কাজ নাই কিন্তু ভালো বেতন পাবেন! কি ধরনের কাজ চান? আমি বলে দিব আপনাকে যাতে হাউস পোর্টার অথবা ফেকটরিতে কারো সাহায্যকারীর কাজ না দেওয়া হয়। ওটার জন্য আপনি যথেষ্ট সুশীল!”
একটা তিক্ত হাসি দিয়ে বিহ্মুক বলল “কি বলছেন আপনি….. সত্যি!
“ আমি ম্যানুয়াল কাজ করতে পারব? দোকানদার হওয়ার সময় চলে গেছে আমার। ব্যাবসা শিখতে হলে তরুন বয়স থেকেই শুরু করতে হয়। কেউ আমাকে হাউস পোর্টার হিসাবে নেবে না কারন আমার সেটার যোগ্যতা নেই। আর ফেক্টরিতে চাকরি পাওয়ার কথাই আসে না কারন আমি বানিজ্য সম্পর্কে কিছুই জানি না!”
“ধ্যাত! আপনি সবসময় ন্যার্যতা খুঁজেন। কাঠ ফালি করতে কোনো সমস্যা আছে?”
—“আমি প্রত্যখান করতাম না কিন্তু পেশাগত কাঠুরেরাই কাজ পাচ্ছে না ইদানিং!”
“ওহ! সব অলসরাই এভাবে তর্ক করে যখনই কোনা প্রস্তাব দেয়া হয় আর সাথে সাথে প্রত্যাখ্যান করে! আপনি কি আমার বাড়িতে কাঠ ফালি করার চাকরি করতে চান?”
—“ অবশ্যই ”
“ খুব ভালো” দেখা যাক তাহলে কেমন পারেন” উদ্ববগ্নভাবে খুব বেশি প্রফুল্লতা না দেখিয়ে হাত ঘষতে ঘষতে রান্না ঘর থেকে রাধুনিকে ডেকে পাঠালেন।
“এইযে, ওগলা, এই ভদ্রলোককে চালাঘরে নিয়ে গিয়ে কিছু কাঠ ফালি করতে দাও!”
বিহ্মুকটা কাধঁ ঝাঁকুনি দিতে দিতে রাধুনির সাথে এমনভাবে গেলেন যেন তিনি কোন ধাঁধাঁর মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তার হাবভাব দেখে বুঝা গেল যে সে হ্মুধা নিবারন বা টাকা উর্পাজনের জন্য কাঠ ফালি করতে রাজি হয় নি বরং তার লজ্জা ও আত্মাভিমান থেকে এটা করতে রাজি হয়েছিল কারন তার নিজের কথার জালে নিজে আটকেই এখানে সে। এটাও বুঝা যাচ্ছিল যে উনার উপর তখনও ভদকার প্রভাব ছিল এবং তিনি অসুস্থ ও কাজের প্রতি তার আগ্রহ ছিল না।
স্কভর্টসভ ভোজন কহ্মে প্রবেশ করলেন যাতে জানালা দিয়ে পুরো উঠান এবং চালাঘরে কি হচ্ছে সব দেখতে পারেন। স্কভর্টসভ দেখতে পেলেন রাধুনি আর বিহ্মুক পিছনের রাস্তা দিয়ে উঠানে এসে জলাবদ্ধ তুষারের মধ্যদিয়ে চালাঘরে পৌছায় এবং ওগলা ক্রুদ্ধভাবে বুঝাপড়া করছিল, সে কনুই ঝাঁকুনি দিয়ে চালাঘরের তালা খুলল এবং জোরে ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলল।
স্কভর্টসভ ভাবলো “ মনে হচ্ছে ওনার কফি খাওয়ার টাইমে বিরক্ত করে ফেলেছি ( অনুপযুক্ত সময়ে কাউকে বিরক্ত করা)
আহ্, দুমুখো মহিলা ”
তখন তিনি দেখলেন বিহ্মুকটা একখন্ড কাঠের উপর বসে হাতের মুঠির উপর লাল গালগুলো ঝুকাচ্ছেন এবং গভীর চিন্তায় মগ্ন! রাধুনি তার পায়ের কাছে একটা কুড়াল নিহ্মেপ করে ক্রুদ্ধভাবে মাটিতে থুথু ফেলে লোকটাকে গালি দিতে শুরু করল।কিছু বুঝতে না পেরে বিহ্মুকটা একটা কাঠের গুঁড়ি টান দিয়ে দুই পায়ের মাঝে রেখে ফালি করতে লাগল কিন্তু গুঁড়াটি ডিগবাজি খেয়ে পরে যায়। বিহ্মুক এটাকে আবার তুলে তার ঠান্ডায় জমে যাওয়া হাতের উপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার কুড়াল দিয়ে ফালি করতে শুরু করল এমনভাবে যেন তার গ্যালোসে কুড়াল লেগে যাবে অথবা তার আঙ্গুল কেটে যাবে!পরে আবার গুড়িঁটি পরে যায়।
স্কভর্টসভ এর রাগ এতহ্মনে কমে গেছে। উনার বেতরে লজ্জা কাজ করল এটা ভেবে যে উনি একজন মাতাল, সহজে কাজ না করা এবং হয়তবা অসুস্থও এমন একজনকে দিয়ে শীতের মধ্যে এমন কঠিন এবং কষ্টের কাজ করাচ্ছেন।
তিনি ভোজন কহ্ম থেকে পড়ার কহ্মে যেতে যেতে ভাবলেন “যাই হোক, উনার কাজ উনি করতে থাকুক”
১ ঘন্টাপর ওগলা এসে বলল যে কাঠ ফালি করা শেষ। স্কভর্টসভ বলল “এইযে, এই ৫০ কোপেক উনাকে দিয়ে দাও আর যদি উনি এই কাজ করতে ইচ্ছুক থাকেন তাহলে প্রতি মাসের শুরুতে আসতে বল। উনার জন্য সবসময়ই আমাদের এখানে কাজ থাকবে।”
পরের মাসের শুরুতেই বিহ্মুক আসলো এবং কাজ করে আবার ৫০ কোপেক নিয়ে গেল।যদিও ওনার জন্য দাঁড়ানোটাই কষ্টকর মনে হচ্ছিল। এরপর থেকে প্রায়ই আসতে শুরু করল এবং ওনার কাজ ছিল তুষার জমিয়ে স্তূপ করা, চালাঘর পরিষ্কার করা অথবা গালি ও গদি পেটানো এবং প্রত্যেকবার ৩০ থেকে ৪০ কোপেক পেয়েছে তার কাজের জন্য। একদিন এক অনুষ্ঠানে তাকে একজোড়া ট্রাউজারও দেওয়া হয়েছিল। অনুষ্ঠানের শেষে স্কভর্টসভ তাকে ফার্নিচার সরানো এব্ং মুড়ানোর কাজে লাগিয়ে দেন। ওইদিন বিহ্মুককে অনেকটা সংযত, মনমরা ও নিশ্চুপ দেখাচ্ছিল। উনি আলতোভাবে ফার্নিচারগুলোর কাজ শেষ করেন। শীতে কাঁপতে কাঁপতে মাথা নিচু করে উনি ফার্নিচার ভ্যানের পিছনে আসেন এবং কারো সাথে ব্যস্ততা দেখানোর ভানও করেননি কারন উনি খুবই বিচলিত ছিলেন এটা ভেবে যে কখন না কখন ভ্যানের লোকেরা উনার অলসতা, নির্জীবতা আর অন্যলোকের ছেঁড়া কাপর পরনে দেখে হেঁসে ফেলেন। কাজ শেষে স্কভর্টসভ বিহ্মুককে ডেকে পাঠান।
তাকে ১০০ কোপেক দিয়ে বলেন “বাহ্, আমার কথার প্রভাব পড়েছে তাহলে আপনার উপর। আপনি সংযত এবং কাজের প্রতি কুন্ঠিত না সেটা দেখা যাচ্ছে।
নাম কি আপনার?”
-“লোশকভ”
“আমি আপনাকে আরও ভালো কাজ দিতে পারি, সহজ কাজ লোশকভ! লিখতে পারেন আপনি?”
-“জ্বী, স্যার!”
“তাহলে কালকে এই চিরকুট নিয়ে আমার সহকর্মীর কাছে যান। সে আপনাকে কিছু কপি করার কাজ দিবে। নেশা বাদ দিয়ে কাজ করবেন আর আমি আপনাকে যা বলেছি তা ভুলবেন না!
বিধায় ”
স্কভর্টসভ, লোশকভের কাঁধে আলতো ভাবে স্পর্শ করলেন এবং এইটা ভেবে খুশি হলেন যে উনি একজনকে সততার পথে নিয়ে এসেছেন। এমনকি যাওয়ার সময় হাতও মেলালেন।
লোশকভ চিঠিটা নিয়ে চলে গেল এবং এরপর সে থেকে আর স্কভর্টসভের উঠানে কাজে করতে আসেনি।
একদিন স্কভর্টসভ নাট্যশালার টিকেট কিনতে টিকিট অফিসের সামনে দাড়িয়ে ছিলেন তখন তিনি তার পাশে একজন মেশশাবকের চামড়ার কলার ও বেড়ালের চামড়ার দিয়ে বানানো ক্যাপের মত ক্যাপ পরিহিত এক ব্যাক্তি কে দেখলেন। লোকটা কোপেক দিয়ে জোরেশোরে কেরানি কে একটা গ্যালারীর টিকেট দিতে বলল।
স্কভর্টসভের সাথে সাথে মনে পরল যে এই লোকটা উনার বাড়িতে কাঠ ফালি করত “ লোশকভ! আরে লোশকভ না? কি করেন আপনি? ভালো আছেন?”
-“জ্বী! ভালো আছি। আমি এখন নোটারি অফিসে কাজ করি এবং ৩৫ রাবেল বেতন পাই।”
“খুব ভালো, এটাত নগরে! আমার খুব ফূর্তি হচ্ছে আপনার জন্য। আমি অনেক খুশি। আপনি জানেন, একদিক দিয়ে আপনি আমার ধর্মপুএ কারন আমি আপনাকে সঠিক পথে এনেছি। আমার কথাগুলো মনে আছে? তখনি আপনি প্রায় ভুল পথে চলে গিয়েছিলে। ধন্যবাদ আপনাকে! আমার কথাগুলো মনে রাখার জন্য।”
“আপনাকেও ধন্যবাদ,যদি আপনার সাথে ঐদিন না আসতাম তাহলে হয়তো এখনো আমি আগের মত নিজেকে স্কুল শিহ্মক অথবা ছাএ বলেই পরিচয় দিতাম।আপনার বাড়িতে গিয়ে আমার আত্নরক্ষা হয়েছে, কূপ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি।আমি খুব খুব খুশি। ধন্যবাদ আপনার কথা এবং কাজের জন্য। আপনি ঐদিন যা বলেছিলেন তা চমৎকার ছিল। আমি আপনার এবং আপনার রাধুনীর কাছে কৃতজ্ঞ।প্রভু মহিমা কীর্তন করুক এরকম মানুষদের, মহান নারী উনি।আপনার ঐদিনের কথাগুলো চমৎকার ছিল এবং আমি আপনার কাছে ঋনী থাকব যতদিন বেচেঁ আছি কিন্তু আপনার রাধুনি ওগলা আসলে আমাকে বাচিঁয়েছে আমার বাজে অভ্যাসগুলো থেকে।
কিভাবে?
—আমি যখন কাঠ ফালি করতে আসতাম তখনই উনি বলা শুরু করতেন “ আরে, মাতাল, ইশ্বরকে ত্যাগ করেছিস তবুও মরিস না কেন!” তারপর উনি আমার সামনে বসে বিলাপ করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলতেন” অভাগা ছেলে এই পৃথিবীতে তো সুখ পেলি না, মরার পরও নরকের আগুনে জ্বলবি। হতভাগ্য মাতাল, অভাগা দুঃখী প্রানী!” উনি সবসময়ই এগুলো বলতেন। তিনি আমার জন্য কত কষ্ট পেয়েছেন, কতবার কান্না করেছেন গুনে বলতে পারব না।কিন্তু আমার কাছে সবচেয়ে খারাপ লেগেছিল —উনি আমার বদলে কাঠ ফালি করে দিতেন প্রত্যেকবার। জানেন স্যার, আমি একটা কাঠও ফালি করিনি, উনি সব করেছেন। কিভাবে এটা আমাকে পরিবর্তন করেছে,বাঁচিয়েছে সেটা আমি জানি না! শুধু জানি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।আর উনার মহৎ আচরন আমার আত্নাতে পরিবর্তন এনেছে। আমি এটা কখনোই ভুলবনা।
সময় হয়েছে গ্যালারীতে যাওয়ার, ওনারা বেল দিয়ে দিবেন এখনই! ”
লোশকভ নম তরে গ্যালারীতে চলে গেল।
সমাপ্ত!
No comments